উত্তরাঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে, অর্থনীতি গতিশীল হবে: আসিফ মাহমুদ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:০২ এএম, ২১শে আগস্ট ২০২৫


উত্তরাঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে, অর্থনীতি গতিশীল হবে: আসিফ মাহমুদ
ছবি: সংগৃৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, মাওলানা ভাসানী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামের মানুষের ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের পথ আরও সুগম হলো। আমরা মনে করি, কুড়িগ্রামের কৃষিজ ও শিল্প সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, উত্তরাঞ্চলে বিশাল বিনিয়োগ আসবে, শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং সামগ্রিক অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।


বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘মাওলানা ভাসানী সেতু’ উদ্বোধন শেষে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।


আসিফ মাহমুদ বলেন, যে রাষ্ট্রে ফারাক্কার মতো বাঁধ দিয়ে যখন ইচ্ছে হলো পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের ডুবিয়ে দেয় কিংবা যখন ইচ্ছে হলো বাঁধ আটকে দিয়ে পানি শূন্যতার মতো অমানবিক কাজ করে—সেটা কোনো সরকার, কোনো রাজনৈতিক দল মেনে নেবে না।


তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্র করতে চাই, যে রাষ্ট্রে আর কখনো কোনো শাসক কোনো পরাশক্তির কাছে মাথা নত করবে না। যে রাষ্ট্রে প্রত্যেকটা মানুষ মাথা উঁচু করে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে যাবে।


আরও পড়ুন: সরকারের উদ্যোগে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরেছে: খাদ্য উপদেষ্টা


মতবিনিময় সভায় স্থানীয় জনসাধারণ, সুশীল সমাজ ও বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। 


এর আগে উপদেষ্টা দুপুর পৌনে ১টার দিকে গাইবান্ধায় এসে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ‘মওলানা ভাসানী সেতুর ফলক উন্মোচন করে সেতু উদ্বোধন করেন।


পরে গাড়িতে উঠে গাইবান্ধাবাসীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে করমর্দন করেন আসিফ মাহমুদ। এ সময় গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এলজিইডি কর্মকর্তা, সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।


এদিকে, উদ্বোধনের আগে থেকেই সেতু এলাকাজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোর থেকেই তিস্তা পাড়ে ভিড় জমাতে থাকেন দুই জেলার শত শত দর্শনার্থী এবং সুন্দরগঞ্জ–চিলমারী উপজেলার হাজারো মানুষ। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা দল বেঁধে আসেন জীবনের ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার স্বপ্ন পূরণে তাদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে উচ্ছ্বাস আর গর্বের আলো।


এর আগে গত ১০ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সেতুটির নামকরণ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই পিসি গার্ডার সেতুটি হবে ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’।


আরও পড়ুন: দীর্ঘ অপেক্ষার পর উদ্বোধন হলো 'মাওলানা ভাসানী সেতু'


২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। নানা জটিলতা ও একাধিকবার তারিখ পরিবর্তনের পর অবশেষে ১১ বছর পর চালু হলো এই সেতু।


এলজিইডি সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের অর্থায়নে ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা।


১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটি দেশের ইতিহাসে এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সেতুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক। এর মধ্যে নির্মিত হয়েছে ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু।


ফলে বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ অন্তত ১০টি বাজার সরাসরি সংযুক্ত হবে।


আরও পড়ুন: শুল্ক কমায় হিলি বন্দরে চাল খালাস শুরু, বাজারে দাম কমার আশা


সেতুটি চালু হওয়ায় গাইবান্ধা–কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় আসবে বড় পরিবর্তন। স্বল্প খরচে কৃষি ও শিল্পপণ্যের পরিবহন সম্ভব হবে। গড়ে উঠবে ছোট–মাঝারি শিল্প কারখানা।


ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরের দূরত্ব কমবে ৪০–১০০ কিলোমিটার। পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।


এমএল/